পারিবারিক পরিচিতি :
পাকিস্তানি অপশাসন শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ‘৭১ এর যারা বাংলাদেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন তাদের মধ্যে শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন একটি উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের নাম। শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেনকে বাংলাদেশের ইনভেস্টিগেটিং সাংবাদিকতার জনক বলা হয়। বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতের এই অমর ব্যাক্তিত্ব ১৯২৯ খৃষ্টাব্দের ১ মার্চ মাগুরা জেলার শালিখা থনার শুরুশনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৌলভী মোজাহারুল হক সিরাজুদ্দীনের শৈশবকালেই ইন্তেকাল করেন।
শিক্ষাজীবন:
পিতার অবর্তমানে চাচা মৌলভী ইসহাক এম.এ.বি.টি সাহেবের তত্ত্বাবধানে তার লেখাপড়া শুরু হয়। তিনি

পেশাগতজীবন :ছাত্রজীবন থেকে তিনি তাঁর চাচা মৌলভী ইসহাক সাহেব সম্পাদিত ‘ইমাম’ পত্রিকার সাথে জড়িত ছিলেন। এরপর বি.এ পড়ার সময় কলকাতায় ‘আজাদ’ পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। বি.এ পাশ করার পর তিনি ঐ পত্রিকার সহকারী বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫০ এর ১০ ফেব্রুয়ারী ঢাকায় সংঘটিত রক্তক্ষয়ী দাঙ্গার বিরুদ্ধে ‘দৈনিক আজাদ’ এ তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহন করেন


সাংবাদিক জগতের অন্যতম পুরোধা দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সুযোগ্য অনুসারী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহপাঠী শহীদ সিরাজুদ্দীন হোসেন তাঁর সময়ের সকল প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অনন্য সাধারণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ‘পূর্ব বাংলা রুখিয়া দাড়াও’, ‘চিনিল কেমনে’, ‘শুক্কুইজ্যা কডে’ এ জাতীয় শিরোনাম এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকর হিসেবে তিনি অবিরাম প্রতিবেদন রচনার মাধ্যমে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী চেতনার ভিত রচনার ক্ষেত্রে অসামান্য ভূমিকা পালন করেন। তাঁর রচিত ‘ইতিহাস কথা কও’ গ্রন্থটি এদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অনন্য সম্পদ। তিনিই প্রথম এদেশে অনুসন্ধানী রিপোটিং এর জনক এবং এজন্য তিনি ম্যাগসেসে পুরস্কারের জন্য মনোনয়নও লাভ করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধে ভূমিকা :যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি দুঃসাহসী রাজনৈতিক প্রতিবেদন রচনার মাধ্যমে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা বিস্ময়কর ও অবিস্মরণীয়। সেসময় তিনি অবরুদ্ধ বাংলার খবর প্রবাসী সরকারের নিকট পাঠাতেন। এসময় তিনি পূর্ব পাকিস্তানে নিযুক্ত ডেপুটি মার্কিন রাষ্ট্রদুত আর্চার ব্লাডের একটি গোপন রিপোর্ট প্রবাসী সরকার প্রধান তাজুদ্দীন আহমদের নিকট পাঠিয়েছিলেন, যা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে কয়েকবার প্রচারিত হলে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক হয়েছিল।
প্রকাশিত গ্রন্থ :তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য মৌলিক গ্রন্থ হল, A Look into the mirror, ইতিহাস কথা কও, ছোট থেকে বড়, মহিয়সী নারী ইত্যাদি। তিনি বেশ কিছু বিদেশী গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন। তার অনুদিত পুস্তকের সংখ্যা চল্লিশেরও অধিক। তাঁর অনুদিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হল : Man Against Nature, Sun, Democracy, Gone is gone, জার্মান রূপকথা, পারমানবিক শক্তির রহস্য, আমার জীবন দর্শন, মানব জীবন, অগ্নি পরীক্ষা ইত্যাদি।
সিরাজউদ্দীনের মহত্ত্ব :ব্যাক্তিজীবনে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন ছিলেন সৎ, আদর্শবাদী, কর্মযোগী ও নির্ভীক সাংবাদিক হিসেবে সর্বজন শ্রদ্ধেয়। অসহায় দুঃখী মানুষের জন্য তাঁর অগাধ ভালবাসা ছিল। মানুষের দুঃখকষ্টে তিনি অস্থির হয়ে উঠতেন। তৎকালীন সময়ে পূর্ব

মন্তব্য :সিরাজুদ্দীন হোসেন সম্পর্কে অধ্যাপিকা হামিদা রহমান বলেছেন, “তিনি বিত্তশালী ছিলেন না। তবুও দেশের মানুষ তাঁকে ভালবাসত। বাংলার মানুষের তিনি অকুন্ঠ শ্রদ্ধা কুড়িয়েছিলেন। প্রাচুর্য কিংবা বিলাসিতার মধ্যে তিনি জীবন কাটাননি। তিনি জীবনের

এবি এম মুসা তার সম্পর্কে বলেছেন, “বস্তুত সিরাজুদ্দীন হোসেনকে আমাদের দেশের ইনভেস্টিগেটিভ রিপোটিংয়ের জনক বলা যেতে পারে।” আমরাও এ. বি. এম. মুসার সাথে একমত। কেননা অনুসন্ধানী রিপোর্টের ক্ষেত্রে তিনি যে পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন এদেশে তার পূর্বে আর কেউ তা দেখাতে পারেনি। এজন্য বাংলাদেশে ইনভেস্টিগেটিভ সংবাদপত্র শিল্পের জনক হিসেবে তাঁর নাম যথার্থ।
মৃত্যু :বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়ের প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর এদেশীয় দোসর আল বদর বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর থেকে তাঁর আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই, তবে মরেও তিনি অমর।